বৃষ্টি মহান আল্লাহর মহান দান। অগণন নিয়ামতের একটি। বৃষ্টিহীন মানুষেরাই বৃষ্টির কদর বুঝে। নবী করিম সা. বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। আনন্দচিত্তে বৃষ্টির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতেন। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করতেন। তিনি তার উম্মতদেরকেও বৃষ্টির পানি গায়ে লাগানোর জন্য বলেছেন।
 |
বৃষ্টি এলে নবী করিম সা. বৃষ্টির পানি গায়ে লাগাতেন। দোয়া করতেন। |
মুফতি আবদুল্লাহ তামিমএকবার নবী করিম সা. বৃষ্টিতে বের হলেন। শরীরে বৃষ্টির পানি লাগালেন। নবীজিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কেন তিনি এমনটি করেছেন? তিনি বললেন, ‘বৃষ্টি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে বরকত হিসেবে অবতীর্ণ হয়। তবে বৃষ্টির পানি শরীরে লাগানোর জন্য বৃষ্টির মধ্যে নেমে যাওয়ার দরকার নেই। যদি ঠাণ্ডা লাগার ভয় থাকে; অন্তত দুই-এক ফোঁটা পানি শরীরে লাগালেও সুন্নাহর সাওয়াব পাওয়া যাবে।
বর্ষাকালে যখনই বৃষ্টি হবে আমরা যেন নবী করিম সা এর সুন্নত থেকে বঞ্চিত না হই। অন্তত দুই-এক ফোঁটা পানি হাতে নিয়ে শরীরে লাগানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!
বৃষ্টির দোয়া
الْحَمد لله رب الْعَالمين الرَّحْمَن الرَّحِيم مَالك يَوْم الدّين لَا إِلَه إِلَّا الله يفعل مَا يُرِيد اللَّهُمَّ أَنْت الله لَا إِلَه إِلَّا أَنْت الْغَنِيّ وَنحن الْفُقَرَاء أنزل علينا الْغَيْث وَاجعَل مَا أنزلت لنا قُوَّة وبلاغا إِلَى حين
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, আর রহমানির রহিম, মা-লিকি ইয়াওমিদ্দিন, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফ আলু মা-ইউরিদ, আল্লা-হুম্মা আনতাল্লা-হু লা-ইলাহা ইল্লা-আনতাল গনিয়্যু ওয়া নাহ নুল ফুকারা, আনযিল আলাইনাল গয়সা ওয়াজআল মা-আনযালতা লানা-ক্যুওয়াতান ওয়া বালাগান ইলা-হিন।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর। তিনি সারা বিশ্বের পালনকর্তা, মেহেরবান ও ক্ষমাকারী। প্রতিদান দিবসের মালিক। আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি যা চান তা-ই করেন। হে আল্লাহ, তুমি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তুমি অমুখাপেক্ষী। আর আমরা কাঙাল—তোমার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করো। আর যে জিনিস (বৃষ্টি) তুমি অবতীর্ণ করবে তা আমাদের শক্তির উপায় ও দীর্ঘকালের পাথেয় করো।
এ দোয়া পাঠের অনেক ফজিলত রয়েছে। আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. বলেন, লোকজন রসুলুল্লাহ সা.-এর কাছে অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা নিবেদন করলে রসুলুল্লাহ সা. ঈদগাহে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এই দোয়া করেন। আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। আর বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের ছোটাছুটি দেখে নবীজি সা. হেসে ফেলেন। (আবু দাউদ ১১৭৩)
বৃষ্টিতে দোয়া কবুল হয়
اللهم شيبان نافع উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফি’আহ। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুষলধারায় যে বৃষ্টি দিচ্ছেন, তা যেন আমাদের জন্য উপকারি হয়। (বুখারি ১০৩২; নাসায়ি ১৫২৩)
যখনই বৃষ্টি শুরু হয় তখনই দোয়া করা উচিত। কারণ বৃষ্টি চলার সময়ে দোয়া কবুল হয়। এই সময় দোয়া করাও সুন্নাত। হযরত সাহল বিন সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া কখনও ফেরত দেয়া হয় না। (আবু দাউদ ২৫৪০)
বৃষ্টিতে অনেক সময় বজ্রপাত হয়। রসুল সা. বজ্রপাত থেকে বাঁচার জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। এ দোয়া পাঠ করা হলে ইনশাল্লাহ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সা. যখন বজ্রের আওয়াজ শুনতেন তখন এ দোয়া পড়তেন—
اللَّهُمَّ لاَ تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ وَلاَ تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা-তাক্বতুলনা বিগাজাবিকা, ওয়া লা-তুহলিকনা বিআজা-বিকা; ওয়া আ-ফিনা-ক্বাবলা জা-লিকা।’ অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার গজব দিয়ে হত্যা করে দেবেন না এবং আপনার আজাব দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন না। এসবের আগেই আপনি আমাকে পরিত্রাণ দিন।’ (তিরমিজি ৩৪৫০)
রসুল সা. বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়াও পড়তেন, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, তিনি বলেন, যে এ দোয়া পড়বে সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ২৯২১৩)
শেয়ার করুন
0 coment rios: