বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩

ইসমে আজম কী?

‘ইসমে আজম’ আরবি শব্দ। ইসম অর্থ নাম আর আজম অর্থ শ্রেষ্ঠ, মহান। আল্লাহর অগণিত গুণবাচক নাম রয়েছে। এ নামগুলোর মধ্যে যেগুলোতে সবচেয়ে বেশি আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য ফুটে ওঠে সেগুলোকে ইসমে আজম বলা হয় বলে।
আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে যে নামগুলোতে সেগুলোকে ইসমে আজম বলা হয়।

মুফতি আবদুল্লাহ তামিম

ইসমে আজম
 

ইসমে আজম সম্পর্কে বিজ্ঞ আলেমদের থেকে প্রায় ৪০টি মত বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে আল্লামা সুয়ুতি রহ. তার রচিত ‘আদ দুররুল মুনাজ্জাম ফিল ইসমিল আজম’ নামক গ্রন্থে ২০টি মত উল্লেখ করেছেন।

হযরত আসমা বিন ইয়াজিদ রা. সূত্রে বর্ণিত, রসুল সা. ইরশাদ করেন, ইসমে আজম এই দুটি আয়াতের মধ্যে নিহিত। 
প্রথমত, সুরা বাকারার ১৬৩ নম্বর আয়াত:
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ উচ্চারণ: ওয়া ইলাহুকুম ইলাহু ওয়াহিদ, লা ইলাহা ইল্লা হুয়ার রহমানুর রহিম। অর্থ: আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য (আল্লাহ)। তিনি ব্যতীত আর কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই, তিনি পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু।
 

দ্বিতীয়ত, সুরা আল ইমরানের ১ নম্বর আয়াত:
 اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ (সুনানে আবি দাউদ ১৪৯৬) উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহহুয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম। অর্থ: আল্লাহ তিনিই, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, (সমগ্র জগতের) নিয়ন্ত্রক।
 

কোনো কোনো সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে , الْحَيُّ এবং الْقَيُّومُ আল্লাহর ইসমে আজম। ইমাম রাজি রহ. ও আল্লামা নববী রহ. এ মতকেই গ্রহণ করেছেন। (ফাতাওয়া উসমানি ১/২৬৪)
 
হযরত আবদুল কাদের জিলানি রহ. বলেন, ‘ইসমুল আজম হলো ‘আল্লাহ’ শব্দ। তবে শর্ত হলো তা পূর্ণ একাগ্রতা ও এখলাসের সঙ্গে বলতে হবে। (মিরকাতুল মাফাতিহ, ১/৬)। এ ছাড়াও আরও অনেক মত পাওয়া যায়।  

ইসমে আজমের ফজিলত

হাদিসে ইসমে আজমের ফজিলতও বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আনাস রা. সূত্রে বর্ণিত, একবার রসুল সা. মসজিদে প্রবেশ করেছেন। এমতাবস্থায় এক লোক নামাজ শেষে এ দোয়া করছিলেন, اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنِّي أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ الأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিআন্নি আশহাদু আন্নাকা আনতা আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল আহাদুস সামাদুল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ।

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি, আর তার সমকক্ষ কেউ নেই।’
তখন রসুল সা. তাকে বললেন, ‘তুমি জানো, তুমি কি দিয়ে দোয়া করেছ? তুমি দোয়া করেছ ‘ইসমে আজম’ দিয়ে, যার মাধ্যমে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। এর মাধ্যমে কিছু চাইলে আল্লাহ তা প্রদান করেন। (সুনানে তিরমিজি ৩৫৪৪)
 
কোনো কোনো সাহাবি থেকে বর্ণিত আছে, الْحَيُّ ও الْقَيُّومُ আল্লাহর ইসমে আজম। ইমাম রাজি রহ. ও আল্লামা নববী এ মতকেই গ্রহণ করেছেন। (ফাতাওয়া উসমানি ১/২৬৪)।
আল্লামা জাজারি রহ. বলেছেন, আমার মতে ইসমে আজম لا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম। অর্থ: আল্লাহ তিনিই, যিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, (সমগ্র জগতের) নিয়ন্ত্রক।

ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন, আমি ইমাম আবু হানিফা রহ. থেকে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলার ইসমে আজম হলো, اللَّه (আল্লাহ)। কেননা, এটি আল্লাহর সত্তাগত নাম। তাছাড়া কোরআন মজিদে এই নামটিই ২,৬৯৭ বার এসেছে। এত বেশি অন্য নাম আসেনি। (আত-তাকরির ওয়াত-তাহবির ১/৫)।

শেয়ার করুন

0 coment rios: